বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
রাজধানীর মুগদার ডিআইটি সড়কের আধা কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড। এই সড়কের আইডিয়াল স্কুল গেট থেকে কমলাপুর টিটি পাড়ার মোড় পর্যন্ত হারিয়ে গেছে ট্রাকের তলে। অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা এই ট্রাক স্ট্যান্ডের কারণে রাজধানীর পূর্বাংশের খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা থেকে মানিকনগর হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে রাজধানীর দক্ষিণাংশ থেকে উত্তরের দিকে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পরিবহনগুলোকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাজধানীর সড়কগুলো দেখভালের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি বিভিন্ন সময় তাদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করলেও অজ্ঞাত কারনে মুগদার এই সড়কটির বিষয়ে নির্বিকার। আর উর্ধতন কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে অবৈধ স্ট্যান্ড বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কে ট্রাক ও পিকআপ রাখার কারণে ফুটপাত ও সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে। আর আইডয়াল স্কুলের সমানে বিশালাকারে ময়লার স্তুপের কারনে এখানকার পরিবেশ একবোরেই যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে সকালে অফিস টাইমে আর বিকালে এই সড়কে যানজট সহ্যসীমাকে ছাড়িয়ে যায় বলে তাদের অভিযোগ।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, মুগদা আইডিয়াল স্কুলের সামনে অংশ থেকে টিটিপাড়া মোড় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় একশ’র বেশি ট্রাক ও পিকআপ দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশেও দাড়ানো বিশ-ত্রিশটি ট্রাক। সড়কটির অন্তত আধা কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে দেখে মনে হয়েছে যেন একটি বড়সড় ট্রাকস্ট্যান্ড। তারই ফাঁকফোকর দিয়ে কোনও ভাবে চলাচলের চেষ্টা করছে যাত্রীবাহী বাসগুলো।
জানা গেছে, এসব ট্রাকের বেশিরভাগই কমলাপুরের আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে মালামাল পরিবহন করে। তবে আইসিডির নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ডে জায়গা না থাকার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুগদা-কমলাপুর রাস্তা দখল করেই পার্কি করে রাখা হয়।
এদিকে মুগদা এলাকায় রয়েছে পাঁচশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, মুগদা ইসলামী হাসাপাতাল। প্রতিদিন অগণিত মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তীব্র যানজটের কারণে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল, কমলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের স্কুলগামী শিশু-কিশোররা।
মুগদার স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম কালের খবরকে বলেন, ‘এভাবে শত-শত ট্রাক সড়কে পাকিং করে রাখার কারণে ফুটপাতও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর রাত হলেই টিটিপাড়া মোড় থেকে মুগদা আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।’
‘এজন্য স্থানীয় বাসিন্দার সবসময় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। দিনের পর দিন এভাবে রাস্তার মাঝখানে ট্রাক ফেলে রাখার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
অন্যদিকে সড়কে ট্রাক দাড় করিয়ে রাখলেও যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কোনও সমস্যা হচ্ছে না বলে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের দাবি। বাংলাদেশে কাভার্ডভ্যান ট্রাক ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান খান কালের খবরকে রাস্তায় এভাবে ট্রাক রাখার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এখানে ট্রাক রাখতে চাই না। এখানে সাড়ে চারশ এর মতো ট্রাক রয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোনো ট্রাক রাখার জায়গা নেই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই রাখতে হচ্ছে।’
রাস্তায় ট্রাক রাখার কারণে তীব্র যানজট আর জনভোগান্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্ট্যান্ডের জায়গা দেয়ার জন্য দাবি তুলেছি। ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন সময় রেকার দিচ্ছে, আমাদেরও কষ্ট হয়, কিন্তু কি করবো? আমাদেরও কোনো উপায় নেই। তবে গাড়ি যেনো রাস্তা বন্ধ না করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
এই সড়কের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে গতকাল এ প্রতিবেদকের কথা হয়। ট্রাফিক পুলিশের এই পরিদর্শক বলেন, ‘এদেরকে কোনোভাবেই রাস্তায় পার্কিং থেকে ফেরানো যাচ্ছে না।’
তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি। প্রতিনিয়তই রেকার দিচ্ছি তারপরও এরা কথা কানে নিচ্ছে না।’
ঢাকা পূর্ব ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম কালের খবরকে বলেন, ‘এখানে (রাস্তায়) ট্রাক কাভার্ডব্যান পার্কিং করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। যদি রাস্তায় কেউ গাড়ি পার্কিং করে রাখে তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে মুগদার রাস্তাটি ট্রাক স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর আগে এই সড়কের বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি এখনই ওই এলাকার টিআইকে (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবো।’
অন্যদিকে এই বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুগদা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ভাট্টির বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।